সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি :
সীতাকুণ্ড তথা চট্টগ্রামের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা প্রদীপ ভট্টাচার্য দীর্ঘদিন দূরারোগ্যরোগে ভোগার পর আজ (৪ মার্চ) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরলোকগমন করেছেন। দীর্ঘদিনের এ ঘনিষ্ঠ মানুষটির অকাল প্রয়াণে আমি গভীরভাবে শোকাহত। তাঁর এ মহাপ্রয়াণে সীতাকুণ্ডের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো- তা সহজে পূরণ হবে না। আমি তাঁর পরমাত্মার প্রশান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
প্রয়াত প্রদীপ ভট্টাচার্য ছিলেন চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিপরিচিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াব্যক্তিত্ব। কোনো বিশেষণের বৃত্তে তাকে আটনোর সুযোগ নেই। নানাগুণেই গুণান্বিত একজন মানুষ ছিলেন তিনি। ক্রীড়া, সংগীত, উপস্থাপনা থেকে শুরু করে সকল সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে রয়েছে তার ঈর্ষাণীয় দাপট। তাঁর সাংঠনিক ও ব্যক্তিত্বের ক্যারিসমা অতুলনীয়। তাঁর মতো কর্মঠ, পরিশ্রমী ও দৃঢ়চিত্তের মানুষ খুব কমই দেখা যায়। সীতাকুণ্ড উপজেলা থেকে শুরু করে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সাথে প্রদীপ ভট্টাচার্যের ছিল অন্যরকম সখ্যতা। শুধু চট্টগ্রাম নয়,প্রশাসনের সর্বোচ্চ কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়সহ সরকারি বিভিন্ন অধিদপ্তর ও পরিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা যারা একসময় চট্টগ্রাম জেলা-উপজেলা প্রশাসনে চাকরি করেছেন তাদের মুখেও প্রদীপ ভট্টাচার্যের নাম শোনা যায়।
প্রদীপ ভট্টাচার্য ১৯৬৩ সালে সীতাকুণ্ড পৌরসভার ৩নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম মহাদেবপুরে (বড়বাজার)জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম প্রয়াত বিমল কান্তি ভট্টাচার্য ও মা’র নাম শোভা ভট্টাচার্য। সীতাকুণ্ড সরকারি মডেল হাইস্কুল থেকে এসএসসি, সীতাকুণ্ড কলেজ ও নিজামপুর কলেজ থেকে এইচএসসি ও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। চট্টগ্রাম আর্য সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে তিনি সংগীতে তালিম নিয়েছেন। তাঁর সংগীতগুরু ওস্তাদ নীরদবরণ বড়ুয়া। প্রদীপ ভট্টাচার্যের সংস্পর্শে এসে সীতাকুণ্ডে অনেকেই সংগীতচর্চা করার সুযোগ পেয়েছেন, সংগীতশিল্পী হয়েছেন। আশির দশকে সীতাকুণ্ডসদরে তিনি সীতাকুণ্ড সংগীত একাডেমি প্রতিষ্ঠা করে অনেক গায়ক তৈরি করেছেন।
সীতাকুণ্ডের ক্রীড়াঙ্গনে প্রদীপ ভট্টাচার্য একজন তারকাব্যক্তিত্ব। সিকিশতাব্দিরও বেশি সময়ধরে তিনি সীতাকুণ্ড উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদাধিকার বলে এ সংস্থার সভাপতি। বিভিন্ন সময়ে ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট এর আয়োজন করে সীতাকুণ্ডের ক্রীড়াঙ্গনকে মাতিয়ে রেখেছেন। শুধু সীতাকুণ্ডে নয় জেলাপর্যায়ের ক্রীড়াঙ্গনেও প্রদীপ ভট্টাচার্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাথে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। তিনি এ সংস্থার কাউন্সিলর ও সাবেক নির্বাহী সদস্য। তিনি সিজেকেএস’র ফুটবল কমিটির যুগ্মসম্পাদক। সিডিএফএ’রও একসময় তিনি ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে প্রদীপ ভট্টাচার্য সিজিকেএস’র জিমন্যামটিক্স কমিটির চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার কাউন্সিলর ও বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি সীতাকুণ্ড বসুন্ধরা খেলাঘর আসর (বর্তমানে মেঘমল্লার খেলাঘর আসর) এর প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম-আহবায়ক। একসময় বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনেরও তিনি শিল্পী ছিলেন। সীতাকুণ্ড উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের প্রথম নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক, সীতাকুণ্ড মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, সামজিক ও ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান ‘ ভ্রাতৃসংঘ’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও তিনি অতীতের বিভিন্ন সময়ে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্রাইন কমিটির সহ-সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া তিনি সীতাকুণ্ড সমিতি- চট্টগ্রামের আজীবন সদস্য, সীতাকুণ্ড উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির সদস্যসহ এলাকার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন।
প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরে চাকরি নেন। তিনি বন্দরের অ্যাসিটেন্ট ট্রাফিক ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। ব্যক্তিগতজীবনে তিনি এক পুত্র ও এক কন্যাসন্তানের জনক। স্ত্রী বাবলী ভট্টাচার্য একজন গৃহিনী; ছেলে প্রতীক ভট্টাচার্য ও মেয়ে প্রজ্ঞা ভট্টাচার্য।
উল্লেখ্য, সীতাকুণ্ডের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণে বিশেষ অবদানের জন্যে ২০১৮ সালে সাপ্তাহিক চাটগাঁর বাণী তাঁকে সম্মাননা স্মারকে ভূষিত করে।
Comments are closed.